Sharing is caring!

মো: সামছুল হক,স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী এলাকায় ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি আবাসিক হোটেলে মা ও ছেলের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে। মা কুড়ি বছর বয়সী আশা মনির লাশ হোটেলের বাথরুমের ভেতরে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়েছিল। আর তার এগারো মাস বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহ্ আল রাফির মাথাবিহীন লাশ বস্তায় ভরে হোটেলের খাটের নিচে রাখাছিল। রবিবার ০২ জুন সকাল ১১টার দিকে পুলিশ দুটি লাশ উদ্ধার করে। ওই জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আজিজুল হক নামে এক সেনা সদস্যকে আটক করেছে।আজিজুল হক নিহত আশামনির স্বামী। তার বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া গ্রামে। নিহত শিশুর মাথার সন্ধানে পুলিশ তল্লাশী শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক হত্যাকাণ্ড করার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেনা সদস্য আজিজুল হক চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত। নিহত আশামনির বাবার বাড়ী বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায়। আশামনির ভাই মেহেদি হাসান সনি জানান, সেনা সদস্য আজিজুল হকের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে তার বোনের বিয়ে হয়। দুই মাসের ছুটি নিয়ে সে কিছুদিন আগে বগুড়ায় আসে। এরপর তার ভগ্নিপতি আজিজুল গত বৃহস্পতিবার শহরের নারুলি এলাকায় শশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। তিনি বলেন বেড়ানোর কথা বলে আজিজুল হক তার বোন ও ভাগ্নেকে নিয়ে গত শনিবার বেড়িয়ে পড়ে।বনানীর শুভেচ্ছা হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, গত শনিবার সন্ধ্যার পর আজিজুল হক তার স্ত্রী ও এগারো মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে দোতলার একটি কক্ষে ওঠেন। এরপর রাত এগরোটার দিকে তিনি হোটেল থেকে বের হয়ে যান। তিনি আরো বলেন, রবিবার সকাল এগারো টার দিকে আজিজুল হক হোটেলে কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করতে আসেন। কিন্তু তখন তার সঙ্গে স্ত্রী ও সন্তান না থাকায় আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর আমরা তাকে আটক করে পুলিশে খবর দিই। পরে পুলিশ এসে ওই কক্ষের ভেতরে আজিজুল হকের স্ত্রীর গলকাটা বিবস্ত্র লাশ বাথরুমে এবং বস্তাবন্দী মাথাবিহীন সন্তানের লাশ খাটের নিচে দেখতে পান। শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, সেনা সদস্য আজিজুল হক হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দাবি সে তার সন্তানের মাথা পাশের করতোয়া নদীতে ফেলে দিয়েছে। নিহত শিশুর মাথা খোঁজা করা হচ্ছে। নিহত আশামনির ভাই মেহেদি হাসান জানান, তার বোনের সঙ্গে ভগ্নিপতি আজিজুল হকের দাম্পত্য কলহ ছিল। তার ধারণা দাম্পত্য কলহের কারণেই তার বোন ও ভাগ্নেকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিয়ের সময় তারা ভগ্নিপতিকে মোটা অংকের টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও তিনি নানা অজুহাতে টাকা চাইতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত দুজন হলেন মা আশামণি (২০) ও তাঁর এক বছরের ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফি। অভিযুক্ত সেনাসদস্য আজিজুল হক (২৩) চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত। দুই মাসের ছুটিতে তিনি সপরিবারে বগুড়ায় আসেন। আজিজুল বগুড়ার ধুনটের হামিদুর রহমানের ছেলে।
শাজাহানপুর থানার পুলিশ ও হোটেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় আজিজুল হক তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হোটেলে আসেন। রাত্রীযাপনের জন্য তিনি একটি কক্ষ ভাড়া নেন। রাতের কোনো একসময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, স্ত্রী-সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর প্রথমে হোটেল কক্ষ ত্যাগ করেছিলেন আজিজুল হক। পরে হোটেল কক্ষে এসে নাটক সাজানোর চেষ্টা করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আজিজুল হককে আটক করে।