Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিনিধি।
পুরষ্কার ও সম্মাননা কাল: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের প্রখ্যাত পরিচালক,ঔপন্যাসিক ও গল্পকার | বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন ৭২ এর দশকে | চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার একুশে পদক লাভ করেন ১৯৭৭ সালে এবং সর্বোচ্চ পুরষ্কার স্বাধীনতা পুরষ্কারও লাভ করেন ১৯৯২ সালে | চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু আপসোস! তিনি তার এ সাফল্যের ফলাফল দেখে পারেন নি!! মানুষ ক্ষণস্থায়ী সেটা প্রমান হয় বার বার শিক্ষাজীবন: নিঁখোজ হওয়া জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন | ক্যারিয়ারের শুরুর জীবনে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক ছিলেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। সেই হিসেবে জহির কলকাতা মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন | তিনি তৎকালীন বিখ্যাত দুই চলচ্চিত্র অভিনেত্রীকে বিয়ে করেন ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবী এবং ১৯৬৬ সালে সুচন্দাকে || ক্যারিয়ার জীবন: তিনি ক্যারিয়ারের শুরুর জীবনে বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছিলেন ১৯৫০ সালে || এরই মধ্যে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয় | ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকাতেও যোগ দিয়েছিলেন | ১৯৫৭ তে চলচ্চিত্রতে নিজেকে পদার্পণ ঘটান ,চলচ্চিত্রটি ছিলো জাগো হুয়া সাভেরা… তিনি তাতে সহকারী হিসেবে ছিলেন | প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন। তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেওয়া” তে দেখা যায় যে তিনি সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন,এবং ২১ ফেব্রুয়ারির আমতলার সমাবেশেও ছিলেন | মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং বাঙালিদের পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মান শুরু করেন | চলচ্চিত্র: তিনি তার ৩৭ বছরের জীবনে অনেক উপন্যাস এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন | কখনো আসেনি(১৯৬১), সোনার কাজল(১৯৬২),কাঁচের দেয়াল(১৯৬৩)[তিনি এই চলচ্চিত্রের জন্য ৬৫ এর দশকে নিগার পুরষ্কার লাভ করেন] সঙ্গম(১৯৬৪),বাহানা(১৯৬৫),বেহুলা(১৯৬৬)আনোয়ারা(১৯৬৭) , জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০), টাকা আনা পাই(১৯৭০)[চিত্রনাট্য], স্টপ জেনোসাইড(১৯৭১), ধীরে বহে মেঘনা(১৯৭৩), হাজার বছর ধরে(২০০৫) [এই উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজী সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন] এছাড়াও শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০) প্রথম উপন্যাস। প্রকাশক: সন্ধানী প্রকাশনী (রোমান্টিক প্রেমের উপাখ্যান) হাজার বছর ধরে (১৯৬৪) আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে রচিত আখ্যান। (চলচ্চিত্ররূপ (২০০৫) আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯) বায়ান্নর রক্তস্নাত ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত কথামালা। বরফ গলা নদী (১৯৬৯) প্রথম প্রকাশ: ‘উত্তরণ’ সাময়িকী। অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব গাথা। আর কতদিন (১৯৭০) অবরুদ্ধ ও পদদলিত মানবাত্নার আন্তর্জাতিক রূপ এবং সংগ্রাম ও স্বপ্নের আত্মকথা। কয়েকটি মৃত্যু একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০) তৃষ্ণা (১৯৬২) গল্পসমগ্র সম্পাদনা সূর্যগ্রহণ প্রথম গল্পগ্রন্থ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ) ‘সোনার হরিণ “সময়ের প্রয়োজনে একটি জিজ্ঞাসা হারানো বলয় বাঁধ নয়াপত্তন মহামৃত্যু ভাঙাচোরা অপরাধ স্বীকৃতি অতি পরিচিত ইচ্ছা অনিচ্ছা জন্মান্তর পোস্টার ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদ কয়েকটি সংলাপ (১৯৭১) দেমাক ম্যাসাকার একুশের গল্প অন্যান্য রচনা সম্পাদনা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ (প্রবন্ধ), কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘পরিচয়’ সাহিত্যপত্রের বাংলাদেশ সংখ্যায় (জুলাই ১৯৭১) এ প্রকাশিত হয়। অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত চলচ্চিত্র (প্রবন্ধ), সোভিয়েত বিপ্লবের ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক মহাবিপ্লব উদ্যাপন কমিটির (ঢাকা) স্মরণিকা ‘তরঙ্গ’-এ (নভেম্বর, ১৯৬৭) প্রকাশিত হয়। ওদের জানিয়ে দাও (কবিতা) জহির রায়হান রচনাবলি ১ম খণ্ড জহির রায়হান রচনাবলি ২য় খণ্ড পত্রিকা সম্পাদনা এক্সপ্রেস (ইংরেজি সাপ্তাহিক) প্রবাহ (বাংলা মাসিক) তিনি নিঁখোজ হয়ে যান: জহির রায়হান ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরে আসলেও তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও অনেককে বিহারীরা আটকে রেখেছে বলে খবর পেয়ে ৭২ এর ৩০ জানুয়ারি পুলিশের সাথে মিরপুর ১২ তে যান | সেখানে সকাল সাড়ে ৯ টায় বিহারীরা কালাপানি পানির ট্যাংকের সামনে গুলিবর্ষণ শুরু করলে তিনি নি*হত হন | পরবর্তীতে মিরপুর দখলমুক্ত হলেও তার লাশ আর খুঁজে পাওয়া যায় নি ||