২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

যশোরের বেনাপোল পৌরবাসীর ডেঙ্গু আতঙ্ক সর্বত্র ময়লার স্তুপ

admin
প্রকাশিত আগস্ট ১৮, ২০১৯
যশোরের বেনাপোল পৌরবাসীর ডেঙ্গু আতঙ্ক সর্বত্র ময়লার স্তুপ

Sharing is caring!

 

মোঃ সবুজ মাহমুদ, (যশোর)জেলা প্রতিনিধিঃ
বেনাপোল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রচার করেছেন বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কার্যক্রমই নেই। ভারত থেকে আসা যাত্রীর গায়ের তাপমাত্রা মাপার জন্য এখানে স্ক্যানার মেশিন আছে, টেবিল চেয়ার আছে, কম্পিউটার আছে তবে সেখানে কোনো ডাক্তার নেই। ডেঙ্গু সংক্রমিত এলাকাসহ সারা দেশ থেকে প্রতিদিন এ চেকপোস্ট দিয়ে চার থেকে ছয় হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে।

ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করার কথা বলা হলেও আসলে এখানে তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। পূর্বে যেভাবে ছিল এখনো সে ভাবেই আছে।

এদিকে, বেনাপোল পৌর ও শার্শা উপজেলা এলাকার রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, কবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা তাদের মনে নেই।

বেনাপোল চেকপোস্টে কর্মরত কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সকলেই রয়েছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এখানে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করলে সকলে স্বস্তি পেতাম।

এ ছাড়াও শত শত ভারতীয় ও বাংলাদেশি ট্রাকচালক ও হেলপার পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসা যাওয়া করে থাকে। ডেঙ্গু রোগ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী রাখার জায়গা নেই। আর সেই ঢাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ভারতে যাচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু রোগে কয়েকজন মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। এখানকার সাধারণ মানুষ ধারণা করছেন ঢাকা ও কলকাতা থেকে আসা যাত্রীর মাধ্যমে বেনাপোলেও ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের রাজস্ব অফিসার ইমদাদুল হক বলেন, ডেঙ্গুর বর্তমান যে প্রাদুর্ভাব তাতে সারা দেশের ন্যায় আমরাও আতঙ্কিত। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে ছয় হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত বা ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে কেউ যাচ্ছে বা আসছে কি-না সে ব্যাপারে এখানে চেকিং এর কোনো ব্যবস্থা নেই। চেকপোস্টে কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, বন্দর, আনসার সদস্য, বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী মিলে দুই শ এর অধিক লোক এখানে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এখানে একটি মেডিক্যাল টিম থাকলে আমরা কিছুটা হলেও নিরাপদ বোধ করতে পারি।

ডেঙ্গু সতর্কতা নিয়ে কথা বললে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন স্বাস্থ্য সহকারী হঠাৎ এসে বলেন, সিভিল সার্জন আমাদের জানিয়েছেন কোনো যাত্রীর গায়ে জ্বর আছে কি-না সেটা দেখতে।

অপরদিকে বেনাপোল পৌর সভার ৮৮ হাজার ৬ শ নাগরিকসহ এ বন্দরে কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা, উদ্ভিদ ও সঙ্গনিরোধ অফিস, কয়েক শ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিস, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, পরিবহন অফিসসহ রয়েছে বিভিন্ন এনজিও অফিস। এই বন্দরে বর্তমানে লক্ষাধিক লোক বসবাস করেন। সারা দেশে যে ভাবে এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে তা অত্যান্ত উদ্বেগজনক।

বেনাপোল পৌর এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারিদিকে ছোপ ছোপ পানিতে গাছপালা জন্মে বাগান হয়ে গেছে। ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণে পোকা ও মশা-মাছিতে ভরে গেছে। রাস্তার চারপাশে ডাবের খোলা আর কর্দমাক্ত স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। যা ডেঙ্গু মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ। এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হলে ডেঙ্গু মশার কবল থেকে এ এলাকার মানুষও রক্ষঅ পাবে না। এখানকার মানুষ এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাছে।

পৌরবাসীরা বলছেন, বেনাপোলে কবে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়েছে তা পৌরবাসীর মনে নেই। এলাকার কয়েকজন সচেতন লোক জানান, কয়েকদিন আগে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ও বিজিবি ক্যাম্পে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করেছিল পৌরসভা। এতে সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসেনি।

পৌরবাসীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, যারা বলছেন তারা জানে না। পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবছর মশা নিধনের জন্য ওষুধ স্প্রে করা হয়ে থাকে। বেনাপোল পৌর এলাকায় যাতে এডিস মশা বিস্তার লাভ না করে তার জন্য মাসব্যাপী হাতে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসুচি। আগাছা পরিষ্কারসহ নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বিনামূল্যে পৌর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে জনসচেতনতামূলক কর্মসুচি। পৌরবাসীরও দায়িত্ব রয়েছে তাদের বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার, জানান পৌর মেয়র।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অশোক কুমার সাহা বলেন, শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্তের বা পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২০ জন রোগী এসেছিল। এদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আতঙ্কের কিছু নেই।