Sharing is caring!
তৌফিকুর রহমান আজাদ :: আমাদের দেশে বিরাজমান সবচেয়ে ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা হচ্ছে যৌতুক প্রথা। এ প্রথায় কনের পক্ষ থেকে বরকে যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা ও দ্রব্যসামগ্রী উপঢৌকন দিতে হয়।
আমাদের কৃষিনির্ভর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুকের ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবারকে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়।
অনেক পিতা যৌতুক পূরণ করতে গিয়ে জমিজমা, গৃহস্থালি দ্রব্যসামগ্রী এমনকি ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে নিঃস্ব হন।
এটি একটি সফল ও উন্নতি জাতি গঠনের অন্তরায়…
যৌতুকের মূল কারণ দারিদ্র্য। নারীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, নারীদের পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক দুর্ণীতির প্রভাব এবং সামাজিক অবক্ষয়ও এর জন্য দায়ী।
যৌতুক প্রথার এই প্রচলন বেশিরভাগই দেখা যায় দরিদ্র পরিবারগুলোতে। যেখানে গরিবের কারনে একজন বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেনা ভালো কোন ছেলে বা পরিবারে।
আর ভালো কোন ছেলেও বিয়ে করতে রাজি না,যদিও রাজি হয় তবে তাকে মোটা অংকের যৌতুক দিতে হবে। এইভাবেই চলতে থাকে যৌতুক প্রথা।
অনেক সময় দেখা যায়, স্বামীকে যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে স্ত্রীকে প্রায়ই শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। বাংলাদেশের দূরবর্তী গ্রাম, যেগুলো পুরোপুরী আধুনিকতা স্পর্শ থেকে বঞ্চিত সেখানে এ প্রথার প্রভাব বেশি। প্রকৃতপক্ষে, যৌতুক প্রথা অত্যন্ত অপমানজনক ও ঘৃন্য কাজ। সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রথা নির্মূল করতে না পারলে কল্যাণমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
এ সামাজিক অপরাধ দূরীকরণের জন্য কেবল আইন কিছু নিয়মের বিধিবদ্ধকরণ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। সমাজ সচেতনতা ও বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে। সর্বোপরি, যৌতুক বিরোধী অভিযান এক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে পারে। এ সকল পদক্ষেপ নিতে পারলেই আমাদের সমাজের নারীরা ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে।