Sharing is caring!
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অধিকার সুরক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বুধবার ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহবায়ক ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. মতিউর রহমান। এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সভাপতি প্রফেসর ড. আবু কালাম মোঃ ফরিদ উল ইসলাম, সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাবেক সাধারণ সম্মাদক ও অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব খায়রুল কবির সুমন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. কমলেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, নীল দলের সভাপতি ড. নিত্য ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দেওয়া নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন। তিনি নিজেই অবৈধভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, সামজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। কোষাধ্যক্ষ এবং ড. ওয়াজেদ টেনিং এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর পরিচালক পদেও তিনি দায়িত্বে আছেন। তিনি অনুপস্থিত থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কাজে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি একাই অর্ধ শতাধিক কোর্স পড়ানোর জন্য দায়িত্ব নিলেও কোনে কোর্সেই তিনি পড়াননি। কিন্তু কোর্স পড়ানো বাবদ লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ধারাবাহিক মূল্যায়ন কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণ করান কর্মচারীদের মাধ্যমে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং এমফিল পর্যায়ে তিনি একটি সেশনেই ১৪ জনের তত্ববধায়ক হয়েছেন। চলতি সেশনে আরও ১৪জনকে নিয়ে থাকলে সংখ্যা প্রায় ২৮জন হবে। বাংলাদেশে এককভাবে এতজন গবেষককে একই সাথে গবেষণা তত্ববধায়ক হিসেবে কারও থাকার নজির নেই। অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েলর আইন লঙ্ঘন করে ৭টি বিভাগের প্লানিং কমিটির সদস্য হয়েছেন। বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কর্মকাণ্ডে তিনি স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্নীতি করে চলেছেন। উপাচার্য ক্যাম্পাসে থাকেন না হেতু রেজিস্ট্রার ক্যাম্পাসে থাকেন না। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে লে.ক (অব) প্রকৌশলী মনোয়ারুল ইসলামকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকও করা হয়েছে। কিন্তু আজ অব্দি তিনি ক্যাম্পাসে থাকতে শুরু করেননি। কিন্তু লক্ষাধিক টাকা বেতন নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, রেজিস্ট্রার এবং উক্ত পরিচালক নিয়োগের প্রক্রিয়াও যথাযথ হয়নি।
নিয়োগেও তিনি সীমাহহীন দুর্নীতি-অনিয়ম করেই চলেছেন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি একটি পদ্ধতি চালু করেছেন। এই পদ্ধতিতে ৬০ নম্বরের একটি লিখিত পরীক্ষা তিনি গ্রহণ করেন। এই পরীক্ষার প্রশ্ন তিনি নিজেই করেন। তার পছন্দের প্রার্থীকে অনেক নম্বর দেন। পরে সাক্ষাৎকারে তাকে চাকুরি দেওয়াটা তার পক্ষে সহজ হয়। এমনও হয়েছে যতজনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছ ততজনই আবেদন করেছেন, ততজনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম মজুমদারকে প্রায় ৯টি নিয়োগ বোর্ডে রাখা হয়েছে। উপাচার্যের মাকে একাধিক নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য উপাচার্যের মা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপকও নন। নিয়োগের শর্ত শিথিল করেও নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নন একাডেমিশিয়ান বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা নিয়োগে সর্বোচ্চ বয়স চাওয়া হয়েছিল ৪০ বছর। কিন্তু একই গ্রেডের উপপ্রকৌশলী নিয়োগে বয়স চাওয়া হয়েছে ৫৮ বছর। যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার বয়স ৫৮ বছর। উপাচার্য তার ব্যক্তিগত সচিবকে আহবায়ক এবং ব্যক্তিগতসহকারীকে সদস্যসচিব করে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছেন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্ষমতার চরম অপব্যবার করছেন। ঢাকার লিয়াজো অফিসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা, নিয়োগ বোর্ড, আপগ্রেডেশন বোর্ডসহ অসংখ্য সভা করেন। এতে করে বিশ্ববিদ্যায়ের লাখ লাখ টাকা শুধু যাতায়ত বাবদ ব্যয় হচ্ছে। প্রাধিকারভুক্ত একটি গাড়ি তার পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি ঢাকায় কয়েকটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যক্তিগত সংস্থা জানিপপের কাজ নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীকে তিনি নিজের বাসায় রেখেছেন। তার জন্য নির্ধারিত রংপুরের বাসায় তিনি না থাকলেও সেখানে ১৭ জন কমকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।
উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিচ্ছেন। জাতীয় সংসদ থেকে পাশ হওয়া ২০০৯ সালের ২৯ নং আইনের স্পষ্টত লঙ্ঘন করে চলেছেন। পাশকৃত আইন অনুযাীয় যাকে ডিন কিংবা বিভাগীয় প্রধান করার কথা তাকে না করে নিজেই পদ আকড়ে ধরে আছেন। বিভাগীয় প্রধান যাকে করার কথা তাকে না করে কোথাও নিজেই কোথাও আস্থাভাজনকে বসিয়েছেন। পদোন্নতির জন্য আবেদন করলেও সবাই সমানভাবে মূল্যায়ন পান না। আস্থাভাজনরা দ্রæতই পদোন্নতি পেলেও বাকিদের পদোন্নতি ঝুলে থাকে মাসের পর মাস। অনেক শিক্ষকের চাকুরি স্থায়ী করা হচ্ছেনা। অনেকের ছুটি বিষয়ক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পে-প্রোটেকশন কাউকে দেয়া হয়েছে কাউকে দেয়া হচ্ছে না।
সদ্য নিয়্গে পাওয়া শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বুনিয়াদী কোর্সে নিয়ে যান। সেখানে তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি এবং পাঞ্জাবি কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। জনশ্রুতি আছে, তিনি প্রশিক্ষণরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুবেলা করে পা ধরে সালাম করতে বাধ্য করেন। দু-চার জন ব্যক্তি নিয়মিত সেই বুনিয়াদী কোর্সে ক্লাস নেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই প্রশিক্ষণের কোর্স কারিকুলামও নেই। ইউজিসিও