৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

আরাকানে আসন্ন যুদ্ধ – ভুরাজনীতির জটিল অঙ্ক সরলীকরণ

admin
প্রকাশিত মে ৪, ২০২৫
আরাকানে আসন্ন যুদ্ধ – ভুরাজনীতির জটিল অঙ্ক সরলীকরণ

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিনিধি

 বাস্তবতা

১. চীন আরাকানে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে গভীর সমুন্দ্র বন্দর তৈরী করেছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল এবং গ্যাস পাইপলাইন ধরে বার্মার বুক চিরে চীনের ইউনান প্রদেশে ঢুকবে। এই পোর্ট ব্যবহার করে চীনের নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করবে।

২. যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই চীনের আধিপত্য রোধে সচেষ্ট। যেমনটি তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্য রোধে সচেষ্ট ছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত অনুপ্রবেশ সেই সুযোগটি করে দিয়েছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ পরিচালনার অর্থনৈতিক চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজেরাই তাসের ঘরের মত ভেঙে পরে।

৩. ভারত আরাকানের প্রধান শহর আকিয়াবকে ঘিরে একটি সংযোগ প্রণালী তৈরী করেছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মিজোরামের সাথে সংযোগ স্থাপন করার জন্য। বাংলাদেশ যেহেতু ট্রানজিট দিতে অনাগ্রহী তাই এই বিকল্প পদ্ধতি।

৪. আরাকানের উত্তরাঞ্চল মুসলিম অধ্যুষিত এবং দক্ষিনাঞ্চল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ২০১৬ সালের শেষভাগে আরেক জন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আন সান সুচির নেতৃত্বে বার্মার সেনাবাহিনী মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালায় যাদের সহযোগী ছিল আজকের আরাকান আর্মি। ১০ লক্ষরেও বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। চার মাস ধরে চলা গণহত্যায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারায়। এর পেছনে সমর্থন ছিল চীনের। এলাকাটি মানবশূন্য করতে পারলে তাদের নিয়ন্ত্রণে অবকাঠামো উন্নয়ন সহজ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা : বিএনপি – জামাতের ব্যাপক প্রচারণা ছিল বাংলাদেশ যেন বার্মার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। আমীরুল মুমিনীন এর্দোগানও উস্কে দিচ্ছিল যুদ্ধের জন্য। কিন্তু শেখ হাসিনা জানতেন যুদ্ধে জড়ানো যতটা সহজ বেরিয়ে আসা ঠিক ততটাই কঠিন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই শত চাপ সত্ত্বেও তিঁনি শান্তির পক্ষে ছিলেন। এর আগে কক্সবাজারের খুব কাছে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরীতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারত আগ্রহ দেখায়। তিঁনি কাউকেই দেন নি। সোনাদিয়া থেকে মাত্র বিশ কিলোমিটার দূরে জাপানকে অনুমতি দেন ৬,০০০ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্দুৎকেন্দ্র তৈরিতে। এই কয়লা আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। তাই গভীর সমুদ্র বন্দর দরকার, জাপান তৈরী করলো গভীর সমুদ্র বন্দর, জাপানের খরচে। এই ভাবে তিঁনি বুদ্ধিমত্তার সাথে ভূরাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তিনটি শক্তিশালী দেশকে এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করলেন।

বর্তমান পরিস্থিতি :

১. বেশ অনেকদিন থেকেই আরাকান আর্মি তিনটি প্রধান শহর বাদে পুরো আরাকান রাজ্য দখল করে ফেলেছে।

২. এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাব অনেকবছর থেকেই। বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যাও প্রত্যাখ্যান করেছেন, প্রাণে বেঁচে গেছেন কিন্তু ক্ষমতা হারিয়েছেন।

৩. অবশেষে, বিশ্বমোড়লদের অনুগত দাস ইউনুসকে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে একটি আন্দোলন সফল করা হলো, যার ফলাফল সরাসরি বাংলাদেশ বিরোধীদের ক্ষমতায় আরোহন ।

৪. মাত্র ন মাসের মধ্যে সেন্ট মার্টিন অবরুদ্ধ করা হলো এবং এখন বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড ব্যবহার করে করিডোর দেয়া হচ্ছে। যুদ্ধ অবশ্যাম্ভাবী।

৫. যুদ্ধ শুরু হলে, ইউনুসকে আর নির্বাচন দিতে হবে না। অনির্দিষ্টকাল আমৃত্যু ক্ষমতা। বিশ্বের গণমাধ্যমে আদো আদো কথা বলে যাবেন। পক্ষ – বিপক্ষ/ক্রিয়া -প্রতিক্রিয়া : ১. যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে আরাকান আর্মিকে গোটা আরাকানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। ২. ভারতও আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হবে। ৩. চীন বসে থাকবে না। বার্মিজ জান্তাকে মাঝারী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে যার অনেকগুলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ট্রেনিং ক্যাম্প গুলোর উপর পড়বে। ৪. চীন ভারতের মিজোরাম, মনিপুর এবং নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্রে সজ্জিত করবে। ৫. এদিকে জামাত আবদার করেছে আরাকানের উত্তরাঞ্চলের কিছুটা অংশ নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বানানো। জামাতের এই আবদার চীনের কাছে যাতে করে ওই অংশটি দিয়ে চীন বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে যদি আরাকানের বাকি অঞ্চল চীন হারায়। জামাত রোহিঙ্গাদের সাথে সম্পৃক্ত সত্তরের দশকের শেষভাগ থেকে এবং বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে (১৯৯১-৯৬) সেখানে রীতিমতো জামাতের ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলে, মদ্ধপ্রাচ্যের অর্থে জামাত নেতা যুদ্ধপরাধী মীর কাশেম আলী টাকার পাহাড় গড়ে তোলে – ইসলামী ব্যাঙ্কের যাত্রা সেখান থেকে।

৬. জামাতের এই আবদারে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছুটা অংশ চলে যাবে। সবচেয়ে সুবিধা হবে তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলাম রক্ষার জন্য স্লোগান তুলে একটি বিপুল জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্ধ করা এবং জঙ্গিবাদকে ইউনূসের তৈরী তৌহিদী জনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া।

৭. পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সংস্থা আইএসআই ৭১ এ পাকিস্তানের এবং সেবাদাস জামাতের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবে বাংলাদেশে এবং ভারতের উপর। সন্ত্রাসী তৈরীর ব্যাপারে পাকিস্তানের কোনো তুলনা নেই। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের আচ্ছাদনে ঢেকে দিয়ে ব্যার্থ রাষ্ট্র করার মধ্যে ৭১ এর পরাজিত শক্তির যে আনন্দ, সেটা তারা এত সহজেই ছাড়বে কেন ? ভারতের পূর্বাঞ্চলেও চলবে প্রক্সি ওয়ার বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে।

ফলাফল : ১. প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ আরও মৌলবাদের দিকে দ্রুত ধাবিত হবে যেমনটি হয়েছিলো পাকিস্তানে আফগান যুদ্ধে করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে। বাংলাদেশে থেকে জন্ম নেবে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের নায়কেরা। ২. বার্মিজ সরকার, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের ক্রীড়ানকরা সক্রিয় থাকবে খোদ ঢাকা সহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে। একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য সিনেমা হল, শপিংমলগুলোতে বোমাবাজি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হবে। অল্প খরচে সবচেয়ে বেশি সংখক মানুষ হত্যা করে বিবিসি, সিএনএন আর আল জাজিরার হেডলাইন হওয়ার আকর্ষণ কোন জঙ্গী গ্রূপ ছাড়বে ? ৩. বাংলাদেশের মানুষ কতটুকু সহি মুসলমান আর কতটুকু না, সে নিয়ে হতাহত হবে। ৪. ইউনুস বলেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়া হবে, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর হোতারা পাসপোর্টের অভাবে যাতায়ত করতে পারে না। ইউনূসের বদন্যতায় তারা বাংলাদেশের হেড