১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মাদ্রসার নাম পাল্টিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ৭, ২০২৩
মাদ্রসার নাম পাল্টিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

Sharing is caring!

স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁয় একটি মাদ্রাসার নাম পাল্টিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাকে বাদ দিয়ে ভূয়া জমি দান দেখিয়ে নতুন একজনকে প্রতিষ্ঠাতা বানানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। মাদ্রাসার নাম করে আদায় করা কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে কয়েকজন আদায়কারী আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এসব অভিযোগের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সদরে বসবাসকারী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উপণ্ডপ্রশাসনিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান অভিযোগ করেন যে, তিনি তার নিজের গ্রাম নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে আশেপাশের কয়েক গ্রামের ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের নিয়ে ২০০৯ সালে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তার মায়ের নামানুসারে ওই মাদ্রাসার নামকরণ করা হয় ‘আয়লা বানু মেমোরিয়াল হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’। ২০১২ সালে মাদ্রাসাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় নামকরণ করা হয় ‘আয়লা বানু মেমোরিয়াল হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’এবং আনিছুর রহমানকে প্রতিষ্ঠাতা ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালে তিনি বিনিময়সূত্রে পাওয়া তার ৪ শতক জমি ওই মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করে দিয়ে সে জমির উপর মাদ্রাসার ঘর নির্মাণ করেন। তখন থেকে গতবছর পর্যন্ত তিনি ও তার বড়ভাই আমজাদ হোসেন নিজ অর্থ ব্যয়ে মাদ্রাসাটির উন্নয়ন ও পরিচালনা করেন। প্রতিবছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠাতা আনিছুর রহমান জেলার পত্নীতলা উপজেলায় বদলী হন। এই সুবাদে পিরোজপুর গ্রামের মৃত বারু মন্ডলের ছেলে মোজাহার আলী নিজেকে ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জাহির করার জন্য তার পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত ৩ শতক জমি মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করে দেন। কিন্তু অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই জমি ১৯৯২ সালে তার পিতা তার ভাই তোফাজ্জল হোসেনের নামে দানপত্র রেজিষ্ট্রি করে দেন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পরে ভূয়া জমি দিয়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠাতা সাজার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সাথে তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে মাদ্রাসার নাম বদল করে ‘পিরোজপুর নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা’ এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবি করেন।
এছাড়া গত ৫ বছরে মাদ্রাসার প্রায় আড়াই হাজার বদরী ১৩ কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার বিত্তবানদের কাছ থেকে বাৎসরিক মোটা অংকের চাঁদা গ্রহণ করে ১৬ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মাদ্রাসার উন্নয়ন ও বার্ষিক মাহফিল বাবদ সারা বছর আদায় করে সে টাকা মাদ্রাসায় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় নতুন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবি করা মোজাহার আলী ও তার লোকেরা একাধিকবার আনিছুর রহমান ও তার ভাই আমজাদ হোসেনের উপর হামলা চালায়। এখন তাদের ভয়ে আনিছুর রহমান এলাকায় যেতে পারছেন না। এসব ব্যাপারে নওগাঁ সদর মডেল থানায় একাধিক জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন, কমিটিতে নতুন প্রতিষ্ঠাতা নিয়োগ, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের অনুমতি না নিয়ে বদরী ১৩ কার্ড হ্যাকিং করে মাদ্রাসার নামে আদায় করা ১৬ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ প্রভৃতি বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সবশেষ অভিযোগ দেয়া হয় গত ১৬ অক্টোবর। এসব অভিযোগ তদন্তাধিন রয়েছে।
সরেজমিনে ওই মাদ্রাসায় গেলে নতুন প্রতিষ্ঠাতা দাবি করা মোজাহার আলী জানান, আনিছুর রহমানও প্রতিষ্ঠাতা রয়েছেন। তার দান করা জমি ভূয়া নয় দাবি করে বলেন ওই জমি তিনি না পেলে তার ভাই তো পাবেন। আগের কমিটি ৪/৫ গ্রামের মানুষকে নিয়ে করা জন্য তারা এবার শুধুমাত্র পিরোজপুর গ্রামের মানুষ নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন বলে জানান। কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান ও মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট রফিকুল ইসলাম বদরী ১৩ কার্ড ও বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসার নামে টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করে জানান, সেসব টাকা মাদ্রাসার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। তবে মাদ্রাসার নামে কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি বলেও তারা জানান।