১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিমানবন্দরে তৎপর হেলথ ইউনিট প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাস ঠেকাতে শাহজালালে সর্বোচ্চ সতর্কতা

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ২১, ২০২০
বিমানবন্দরে তৎপর হেলথ ইউনিট প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাস ঠেকাতে শাহজালালে সর্বোচ্চ সতর্কতা

Sharing is caring!

Manual3 Ad Code

অভিযোগ ডেস্ক : চীনের সংক্রমিত ভয়ংকর রোগ নতুন ভাইরাস এসএআরএস ( সার্স ) ঠেকাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

 

এর অংশ হিসেবে চীন থেকে আসা সরাসরি ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী এবং বয় ও আয়াসহ হেলথ ইউনিট।

 

Manual2 Ad Code

এদের নিয়ে সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিমানবন্দরে ওরিয়েনটেশন প্রোগ্রাম করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাসহ বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নার্স বয় ও আয়াসহ সংশ্লিষ্টরা এ ওরিয়েনটেশনে অংশ নেন। সোমবার সন্ধ্যা থেকে এ সতর্কতা ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে বলে জানান বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান।

 

এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের তথ্যমতে, ঢাকা-চীন-ঢাকা রুটে প্রতিদিন সরাসরি চীন থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, চায়না ইস্টার্ন ও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের ৬টি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করে। চীন থেকে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোসহ এসএআরএস ভাইরাস প্রতিরোধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান পরিচালক।

Manual6 Ad Code

 

তিনি বলেন, চীন থেকে আসা ৩টি সরাসরি ফ্লাইটের যাত্রীদের ফিজিক্যাল স্ক্রিনিং করানো হবে। বিমানবন্দরে স্থাপিত থার্মাল স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে আসার সংকেত দিলে ওই যাত্রীকে পরীক্ষা করবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। শুধু তাই নয়, চীনের নতুন ভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (এসএআরএস) যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সেজন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Manual8 Ad Code

 

বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ইউনিটের প্রতিনিধি ডাক্তার নজরুল ইসলাম জানান, সাধারণত কারও শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকলেও থার্মাল স্ক্যানার সংকেত দেয়। চীন থেকে আগত এ ধরনের যাত্রীকে আটকের পর বিমানবন্দরে কোয়ারেনটাইন রুমে রেখে হেলথ ইউনিটের সদস্যরা তাকে পর্যবেক্ষণ করবেন। শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তাকে (যাত্রী) পার্শ্ববর্তী কুর্মিটোলা আর্মড ফোর্সেস জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি যাত্রীরা চীনের কোন শহর থেকে এসেছেন, কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, অবস্থানের সময়সহ বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

 

জানা গেছে, এসএআরএস একটি নিউমোনিয়া-সংশ্লিষ্ট প্রাণঘাতী ভাইরাস। চীনের উহান শহরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ জন। তবে লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশনস ডিজিজ অ্যানালাইসিসের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে।

 

সার্স ভাইরাসের কার্যকারিতা ও উপসর্গ  
সার্সের আক্রমণে ৫ দিনের মধ্যে ফুসফুসে যক্ষ্মার সংক্রমণ হয়। তারপর একাধিক অঙ্গ বিকল, সবশেষে মৃত্যু।

 

ভারতের আনন্দবাজার অনলাইন জানায়, গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) মধ্য চীনের উহানে ৬৯ বছর বয়সি এক ব্যক্তি মারা যান ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। ওই অঞ্চলটিকে সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম)-এর জীবাণু সংক্রমণের এপিসেন্টার বা উৎসস্থল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

Manual4 Ad Code

আতঙ্কের বড় কারণ সার্স-এর ভয়াবহতা আগেও দেখেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশ। ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে চীনের মূল ভূখণ্ডে ৩৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। হংকংয়ে মারা যান আরও ২৯৯ জন।

 

থাইল্যান্ড ও জাপান থেকেও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর মিলেছে। কিন্তু দুদেশের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আক্রান্তরা সম্প্রতি চীনের উহান প্রদেশে গিয়েছিলেন। উহান প্রশাসনের সন্দেহ, সি-ফুড বাজার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষের থেকে অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমণের জোরদার প্রমাণ মেলেনি। যদিও এই আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দিতে রাজি নয় প্রশাসন।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র এক চিকিৎসক জানান, যদি সামান্য কিছু মানুষের থেকে অন্য মানুষের দেহে সংক্রমণের ঘটনা জানা যায়, সেটা খুব অবিশ্বাস্য হবে না। বিশেষ করে একই পরিবারের সদস্যের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতেই পারে। যেমন, ভাইরাস আক্রান্ত একটি লোক সি-ফুড হোলসেল মার্কেটে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। সেখান থেকেই তার সংক্রমণ হয়েছে বলে চিকিৎসকদের অনুমান। কিন্তু তার স্ত্রী ওই বাজারে কাজ না করলেও একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনিও।

 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রহস্যময় ভাইরাসটি করোনাভাইরাস পরিবারের হতে পারে। এই ভাইরাসেরা কখনও কখনও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সামান্য সর্দি-জ্বরকে সার্স বা ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরাটরি সিন্ড্রোম’-এর মতো ভয়াবহ রোগে রূপান্তরিত করতে পারে।

 

সার্স-এর খবর প্রথম মিলেছিল ২০০২ সালে, দক্ষিণ চীনে। এর পৃথিবীর অন্তত ৩৭টি দেশ থেকে ৮ হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। ৮০০ লোক মারা গিয়েছেন সার্স-এ।