১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বললেন মনোনয়নবঞ্চিত নাছির

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বললেন মনোনয়নবঞ্চিত নাছির

Sharing is caring!

Manual2 Ad Code
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীন – ছবি : সংগৃহীত

 

 

অভিযোগ ডেস্ক : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন তিনি মিথ্যাচার, অপরাজনীতি, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

 

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

 

আ জ ম নাছির বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। আবারও মেয়রপ্রার্থী হতে চাইলেও শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চট্টগ্রাম নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়।

 

এর আগে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাছিরের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে তার সঙ্গে দুজনকে কেক কাটতে দেখা যায়। তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খানের ছোট ভাই মামুনুর রশিদ খান হেলাল ও মামাতো ভাই একরাম খান হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।

 

Manual3 Ad Code

 

মতবিনিময় সভায় নাছির বলেন, কেউ যদি আমাকে এসে বলতো যে ভাই, আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও। আমি তো উইলিংলি ছেড়ে দিব। এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার-অপরাজনীতির প্রয়োজন ছিল না।

Manual8 Ad Code

 

নিজের রাজনৈতিক অতীতের বিশদ বিবরণ দিয়ে নাছির বলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রাজনীতি করেছি, আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণ করেছি। … আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে এবাদত হিসেবে নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য জীবনের যে ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেছি সেখানে ছোট্ট একটা মেয়র! মেয়র পদটা আমার জন্য বড় না। রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়।

 

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করার পরও জাতির জনকের খুনিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার, অপরাজনীতি করা হয়েছে।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাছির বলেন, ৩ দিন আগে আমাকে এক জায়গায় দেখানো হয়েছে। দেখলাম, একটা ছবিকে গোল চিহ্ন করেছে। সেটা হলো যে একরাম খান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি একরাম কুমিল্লার একটি কলেজের অধ্যক্ষ ও কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। তিনি ওখানকার থানা আওয়ামী লীগেরও মেম্বার।

 

Manual8 Ad Code

ছাত্রলীগের একই কমিটিতে থাকা টিপু নামে এক ব্যাংকারের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া একরাম কোনো এক ‘চরম দুঃসময়ে’ তাকে ও টিপুকে দেড়-দুমাস আশ্রয় দিয়েছিলেন বলে জানান মেয়র নাছির।

 

তিনি বলেন, সেই সুবাদে যোগাযোগ, এ কারণে কৃতজ্ঞ। এখানে তার একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান… আমাকে এসে বললো যে, আপনি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা একটু উদ্বোধন করে দিলে…। আমি জাস্ট ওকে চিনি সেই হিসেবে ওখানে অক্সিজেনে, গিয়ে জাস্ট একটা কেক কেটে, আমি চলে এসেছি, তাও গিয়েছিলাম বাচ্চার স্কুল থেকে।

 

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নাছির বলেন, পাশে কে দাঁড়িয়েছে, আমি চিনি না। আরেকটা যেটা শাহরিয়ার রশিদ খানের ভাই যাকে বলা হয়েছে তাকে জীবনেও দেখিনি।

 

মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কর্মকাণ্ড চুলচেরা বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়ে নাছির বলেন, আমাদের দেশে একটা বিষয় আছে- দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা আমরা বুঝি না। যখন থাকে না তখন মর্মটা বুঝা যায়।

 

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস। বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নেতারা।

 

যে বিরোধিতার অংকে উত্থান হয়েছিল নাছিরের সেই বিরোধিতার অংকেই মেয়র পদে মনোনয়ন থেকে নাছির ছিটকে যান বলে আলোচনা চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

Manual5 Ad Code

 

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরোধে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ঘোষিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাছির। এর আগে নগর কমিটির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না তিনি। এর এক বছর পর সিটি মেয়র পদে তিন বারের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রার্থী হতে আগ্রহী হওয়ার পরও দলের মনোনয়ন পান নাছির। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমকে হারিয়ে তিনি মেয়র পদে জয়ী হন।

 

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ, জলাবদ্ধতার প্রতিশ্রুতি পূরণে অনীহা, সিডিএ’র সাথে বিরোধ, বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা ঘিরে নগরীর সাংসদের সঙ্গে বিরোধ, রাজনৈতিক ইস্যুতে বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বিরোধী পক্ষকে ইন্ধন দেয়াসহ দলে নানা কারণে সমালোচিত হন নাছির। সবশেষে দলীয় মনোনয়নের প্রশ্নে এদের বিরোধিতাসহ নগর কমিটির মহিউদ্দিন শিবিরের নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়েন নাছির।