১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ওমর সানী এক সুপারস্টার হয়ে ওঠার গল্প!

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৭, ২০২০
ওমর সানী এক সুপারস্টার হয়ে ওঠার গল্প!

Sharing is caring!

Manual6 Ad Code

অভিযোগ ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রে নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় সুপারস্টার ওমর সানী চলচ্চিত্রে এসে জয় করে নিয়েছেন অসংখ্য দর্শক শ্রোতাদের মন। সাধারণ একজন নায়ক থেকে হয়ে গেছেন একজন কিংবদন্তি সুপারস্টার । তার এই সুপারস্টার হয়ে ওঠার গল্প আজ লিখবো কিভাবে তিনি চলচ্চিত্রে এলেন দেখলেন এবং জয় করলেন মোট কথা তার অভিনয় জীবনের সাফল্য ব্যর্থতা ও কারন সবকিছু ই থাকবে এই লেখায়। পাঠকদের সুবিধার্থে ধারাবাহিকভাবে সুপারস্টার ওমর সানীর অভিনয় জীবনের সাফল্য ব্যর্থতা ও আবার নিয়মিত হওয়া সবকিছু তুলে ধরা হবে।

 

জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা :

 

সুপারস্টার ওমর সানির ডাকনাম ইমরান হাওলাদার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌর নদীতে। খুবই সাধারণ পরিবারে তার বেড়ে ওঠা বাবা সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন সেই সুবাদে ঢাকাতেই বেশি অবস্থান করেছেন তার পরিবার। ওমর সানির শৈশব কেটেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ জিনজিরা এলাকায়। এখানে বেশ কয়েক বছর থাকার পর ঢাকার ফার্মগেট এ তেজকুনি পাড়ায় বসবাস করেছেন সেখানে তার কৈশোর যৌবনের প্রতিটা সময় চলে গেছে। অতএব সানির গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয়নি। তবুও সে নিজের পরিচয় কখনো ভুলে যায় নি বরং গর্ব করে বলতে থাকে তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে এটাই একজন সুপারস্টারের মহৎ গুণ।

 

Manual3 Ad Code

চলচ্চিত্রে যেভাবে এলেন ও অনুপ্রেরণা :

 

Manual2 Ad Code

সুপারস্টার ওমরসানি হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি যার অবদান ছিল তিনি সানির বাবা ও বড়ভাই। ওমর সানির বাবা দিলীপ কুমার রাজেশ খান্না ধর্মেন্দ্র অমিতাভ বচ্চন তাদের ছবি দেখতেন এবং সানিকে বলতেন তুমিও যদি এরকম নায়ক হতে পারতে তাহলে কত ভালো হতো তোমাকে সবাই চিনত সারা বিশ্বে তোমার নাম ছড়িয়ে যেত বাংলা চলচ্চিত্রের তোমার অবস্থান হত এরকম অনেক কথাই বলতেন সানী ও আবার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনতেন। সে নিজেকে দেখতেন এবং তার বডি ফিটনেস সবকিছুই নায়ক সুলভ ছিল। সানি মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি খুব বেশি দেখতেন এবং খুব ভালোবাসতেন। সেজন্য তার অভিনয়ের মাঝে অনেকটা মিঠুন চক্রবর্তীকে দেখা যায় যদিও সে সরাসরি বলেনি কিন্তু দর্শক তাকে একজন মিঠুন চক্রবর্তীর মধ্যে দেখতে পায়। প্রতিটা মানুষের একজন আইডল থাকে মিঠুন চক্রবর্তী সানির আইডল হলেও হতে পারে । চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ক্ষেত্রে সানি খুব একটা পোশাক ছিল না সানির বড় ভাই পোশাক কিনে দিতেন বিদেশ থেকে শুটিংয়ের জন্য। অতএব নায়ক হয়ে ওঠার পিছনে তার বড় ভাইয়ের অবদান অনেক। ঢাকাই সিনেমার পাড়ায় সানি সব সময় ঘোরাফেরা করতেন যদি একটু সুযোগ পায়। অনেকদিন থেকে ঘোরাফেরা করতেন কিন্তু কোনো সুযোগ পাচ্ছিলেন না একসময় ফারুকের মশাল ছবিতে কিশোর চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান ১৯৮৯ সালে। তারপর আর কোন সুযোগ পাননি । তবুও সে হাল ছাড়েনি নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন চিত্রপরিচালকদের সাথে যদি কোনদিন সুযোগ আসে এই আশায়। একসময় চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা দারাশিকো সাথে পরিচয় হয়। তার পরিচালিত একটি ছবি সুজন বাশী নামে নায়ক হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু ছবিটির প্রযোজক মাঝপথেই ছবিটি থেকে সানিকে বাদ দিয়ে দেন। এখানে সানি বড় ধরনের হোঁচট খায়। কিন্তু নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল সে হাল ছাড়েনি চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা দারাশিকোর সাথে ভালো সম্পর্ক হওয়ার কারণে নিয়মিত এফডিসি পাড়ায় আসতে থাকেন একটা সুযোগের অপেক্ষায় । একদিন চিত্র পরিচালক নুর হোসেন বলাই এর সাথে সানির পরিচয় হয় এবং সানি কে প্রথম দেখেই পছন্দ করে ফেলেন। এই নিয়ে সংসার ছবিতে তাকে দ্বিতীয় নায়ক হিসেবে কাস্ট করেন। এটি ছিল সানির নায়ক হিসেবে প্রথম চুক্তিবদ্ধ ছবি। ছবির শুটিং চলছিল একদিন দারাশিকো’র অফিসে সানি কথা বলছিলেন সেই সময় স্বনামধন্য চিত্রপরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম দারাশিকো’র অফিসে আসেন। দারাশিকো সানিকে নজরুল ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ছেলেটি অনেক মেধাবী এবং সুদর্শন দেখো কোন কাজে লাগাতে পারো কিনা। তখন শেখ নজরুল ইসলাম চাঁদের আলো ছবির জন্য নতুন নায়ক খুজছিলেন শেখ নজরুল ইসলাম সানি কে প্রথম দেখে পছন্দ করে ফেললেন এবং চাঁদের আলো ছবিতে তাকে কাস্ট করলেন এর পরের গল্পটা শুধু ইতিহাস চাঁদের আলো ছবি ৯২ সালের সেরা ব্যবসায় সাফল্য দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন।

Manual5 Ad Code

 

সুপারস্টার হয়ে ওঠার পদযাত্রা :

 

Manual5 Ad Code

নব্বই দশকের সুপারষ্টার ওমর সানীর যখন সিনেমা জগতে আবির্ভাব ঘটে তখন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রায় সব সুপারস্টার অভিনেতারা ব্যস্ত ছিলেন সিনেমাজগতে। এতসব তারকার ভীরে ওমর সানী নিজের অবস্থান পাকা করতে ভিন্নধর্মী তবে বানিজ্যিক ধারার ছবি করতে থাকেন। সেই সাথে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও ভিন্ন ভিন্ন নায়িকাদের সাথে অভিনয় করে চমক সৃষ্টি করেন এবং সফল ও ছিলেন। একজন নতুন হিরো হিসাবে এটা ছিল অনেকটা চ্যালেঞ্জ এর মত এবং সেখানে ও সে সফল। তার প্রথম মুভি চাঁদের আলো থেকে সর্বশেষ সাবাস বাঙালী মুভি পর্যন্ত সকল ছবিতেই তিনি ছিলেন ছবির প্রাণ এবং মুভির আকর্ষন। তার অভিনীত প্রেমপ্রতিশোধ,জানেরদুশমন,আখেরীহামলা,ঘায়েল,হুলিয়া,,প্রেমগীত,প্রেমের অহংকার, কাঞ্চন মালা,আজকের ছিনতাই, চাঁদেরহাসি, কুলি,চক্রান্ত,অগ্নিপথ সহ বিভিন্ন ছবিতে ওমর সানীর সাথে ছিলেন।

 

সুপারষ্টার চম্পা,অঞ্জু,অরুনা,জিনাত,শাহনাজ, পপি,লিমা,মুক্তি,সোনিয়া,রেশমা শিং ,আলো,নওসীন সহ বিভিন্ন খ্যাতিমান ও অখ্যাত নায়িকা। আবার মৌসুমি, শাবনুর এর সাথে গড়েছেন দুটি জনপ্রিয় জুটি। অভিনয় জীবনের ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নায়ক ও চরিত্র অভিনেতা হিসেবে টানা প্রায় ১০০টি মুভিতে অভিনয় করেছেন, ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার অভিনীত ছবি হয়েছিল বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি, ১৯৯৪ সালে আত্ব অহংকার, ১৯৯৫ সালে প্রেমের অহংকার ও ১৯৯৭ সালে কুলি ছবি বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মজার ব্যাপার হলো তিনটি ছবিতেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন নায়িকাদের সাথে অভিনয় করেন এর মধ্যে শাবনূর ও পপির সাথে ছিল প্রথম ছবি । এতেই পরিস্কার যে ওমর সানীর ছবি সুপার হিট কিংবা বাম্পার হিট হতে কোন প্রতিষ্ঠিত নায়িকার প্রয়োজন হ্য়নি। মাছরাঙা টিভির কেমিস্ট্রি অনুস্ঠানে মৌসুমী কে প্রশ্ন করা হয় যে জনপ্রিয় জুটি সালমান -মৌসুমী থেকে ওমর সানী-মৌসুমী জুটি গড়তে কার।