Sharing is caring!

নাইম উদ্দিন, পোরশা(নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই অসুস্থ্য। এক্সওে মেশিন, একমাত্র আল্ট্রাসনো ও ইসিজি যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে রোগীরা রোগ নির্ণয়ের আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে রোগীদের বেশি টাকা খরচ করে বাইরের ডায়াগনস্টিক
সেন্টারগুলো থেকে এসব সেবা নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে মানসম্মত
স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার গরীব ও অসহায় মানুষ। গাইনি চিকিৎসক না থাকায় অন্ত:সত্ত্বা ও জটিল রোগীর অস্ত্রোপচার হয় না দীর্ঘ দিন ধরে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবন নির্মাণের কয়েক বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়নি। বাড়ানো হয়নি সুযোগ-সুবিধা। এজন্য গত ৮ বছর ধরে ৩১ শয্যার জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে ৫০ শয্যার কার্যক্রম। আর ৩১ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল ও যন্ত্রপাতি থাকার কথা সেটিও এখন নেই।
৫০ শয্যা হওয়ার পর হাসপাতালটিতে চিকিৎসক পদ থাকার কথা ২১টি। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সহ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রায় প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনজন চিকিৎসককে রোগীদের সেবা দিতে হয়। গাইনি, অবেদনবিদ, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, শিশুসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ সহ ২১টি পদের মধ্যে ১৭টি পদই শূন্য।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১১ সালে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে একটি এক্সরে মেশিন সরবরাহ করা হলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় শুরু থেকে চালু করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে টেকনিশিয়ান এলেও অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণে মেশিনটিকে আর চালু করা হয়নি। এটি সরবরাহের পর থেকে বিগত আট বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিনটি গত ছয় মাস ধরে নষ্ট আর ইসিজি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে গত চার মাস ধরে।
হাসপাতালটিতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একটি অ্যাম্বুলেন্স সচল এবং আরও দু’টি অ্যাম্বুলেন্স গত ১৫ বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে যেটি সচল আছে সেটিও প্রায় নষ্ট হওয়ার পথে। সরজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পর্যাপ্ত চিকিৎসক বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন না।
এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন মাত্র দু’জন চিকিৎসক রোগী দেখেন। অনেক সময় বিভিন্ন কাজের ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসকরা সময়মতো হাসপাতালে আসতে পারেন না। ফলে সে সময় রোগীদের দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। এভাবেই দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হয় বললেন অনেকে। উপজেলা সদরের নিতপুর এলাকার বাসিন্দা আমির উদ্দিন জানান, চিকিৎসক সংকট ও যন্ত্রপাতি খারাপ থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ এই হাসপাতালে আসেনা। দির্ঘ্য দিন ধরে শুনছি, হাসপাতালের যন্ত্রগুলি ভাল হচ্ছে। কিন্তু সে আসাও গুড়েবালি। অর্থবান ব্যাক্তিরা বিভিন্ন ক্লিনিক বা নওগাঁ, রাজশাহী গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন। কিন্তু গরীব মানুষেরা তো বাইরে যেতে পাচ্ছে না। তাহলে এসব গরীব মানুষদের চিকিৎসা কিভাবে হবে- এ প্রশ্ন করেন তিনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক
চিকিৎসক(আরএমও) ডা: মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই চিকিৎসক সংকট দেখছেন। তারা দুই-তিনজন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া রোগ নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মাসের পর মাস বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড: মো: ইবনে ইমাম জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের কথা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লেখা হয়েছে।
বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকেও অবহিত করা হয়েছে। ৫০ শয্যা তো দূরের কথা ৩১ শয্যা হাসপাতালের জন্য যে লোকবল ও সুযোগ-সুবিধা দরকার, তার অর্ধেকও নেই। এই সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে কতৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আসা করছেন