মোঃ ইকবাল মোরশেদ
- স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রামের রাউজানের ৭. বছর আগে স্বামীকে হত্যা করে লাশএকটি পুকুরে ফেলে দেন তারে স্ত্রী তা কেউ জানতো না। হঠাৎ একদিন একটি পুকুর থেকে ভেসে ওঠে কম্বল। পুকুরে এমন মোটা কম্বল কে ফেলবে? আশেপাশের বাড়ির প্রতিবেশীরা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কম্বলের রহস্য কী? অবশেষে কিছু প্রতিবেশীর সন্দেহ হয়। তখন তারা পুলিশকে জানায়, । পুলিশ ডুবুরির সাহায্যে পুকুর থেকে অর্ধগলিত একটি লাশ উদ্ধার করে। কোনভাবেই লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। আশেপাশের বাড়ি বা এলাকার কেউ মিসিং হয়নি সহসাই। তাহলে এই লাশ কার? অবশেষে পুলিশ তদন্ত করে কিছু জানতে পারলো তখন মামলাটি সিআইডির হাতে হস্তান্তর করলো। ২০১৭ সালের একটা বিকেল। ঘরে ঢুকেই কেমন একটা সুঘ্রাণ পাচ্ছিল দুই কন্যা। মা'কে জিজ্ঞেস করতে থাকে কিসের ঘ্রাণ এটা। মা তেমন একটা গা করেন না। পুরো ঘটনাটা বুঝতে যেতে হবে আরও কয়েকদিন পেছনে। ২০১৭ সালের জুন মাস। বর্ষার মৌসুমে চট্টগ্রামে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে যায় নাছিমা আক্তারের ছেলে। তারপর বাড়িতে আর ফেরে না। বিদেশ ভুইয়ে স্বামীকেও জানান না, ছেলে নিখোঁজ হবার কথা। ঘটনাচক্রে সেসময়ই দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নাছিমা আক্তারের স্বামী নাজিম। তিনি কাউকে কিছু না বলে সারপ্রাইজ দিতে হুট করেই হাজির হন স্ত্রী নাছিমা আক্তারের সামনে। কিন্তু সেকি! সারপ্রাইজ হবার বদলে বিরক্তই হন স্ত্রী নাছিমা। স্বামী নাজিম কারণ বুঝতে পারে না। কিছু একটা বেখাপ্পা লাগে তার। বিষয়টা ধরতে পারেন দ্রুতই। তার ছেলে কোথায়? স্ত্রী নাছিমা আক্তার স্বীকার করেন ছেলে নিখোঁজ হয়েছে বেশ অনেকদিন হলো, অনেক খোঁজাখুজি করেও পাননি। সাথে এও স্বীকার করেন এই বিষয়টা স্বামী নাজিমকে জানাতে চাননি। কিন্তু এত বড় ঘটনা কীভাবে চাপিয়ে রাখল নাছিমা? সন্তান নিখোঁজের ঘটনা ক্রমেই রূপ নেয় দাম্পত্য কলহে। নাজিমের কেন যেন কিছুই ভালো ঠেকে না। প্রতিদিন রাতেই ঝগড়া হতে থাকে নাছিমার সঙ্গে। নাছিমা যেন সহ্যই করতে পারে না নাজিমকে। এই চলমান দাম্পত্য জটিলতার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল আসে ২০১৭ সালের ১৮ই আগস্ট। সেদিন ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রী নাছিমাকে চড় মারে নাজিম। সঙ্গে সঙ্গেই ক্রোধে জ্বলে ওঠে নাছিমা। ধাক্কা দিয়ে দরজার কাছে ফেলে দেয় নাজিমকে। দরজার কানায় লেগে মাথার হাড় সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় নাজিমের। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়। নাছিমা স্থির হয়ে এই দৃশ্য দেখে। একসময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিথর হয়ে আসে নাজিমের দেহ। কিছুদিন আগেই স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে আসা নাজিম নিজের ঘরের মেঝেতে মরদেহ হয়ে শুয়ে থাকে। নাজিম যেহেতু কাউকে জানিয়ে আসেনি, তিনি যে বাংলাদেশে আছে এই বিষয়ে পাসপোর্ট ছাড়া কোন প্রমাণ এই পৃথিবীতে ছিল না। নাছিমা সঙ্গে সঙ্গে ঘরে গিয়ে ড্রয়ার থেকে পাসপোর্ট বের করে উনুনের উপর ছেড়ে দেয়। কয়েক মুহুর্তেই জ্বলে ভস্ম হয়ে যায় সদ্য মৃত্যুবরণ করা নাজিমের বাংলাদেশে থাকার একমাত্র প্রমাণ। ঠাণ্ডা মাথায় আলমারী থেকে কম্বল বের করে নাছিমা। স্বামী নাজিমের মরদেহ কম্বল দিয়ে পেচিয়ে স্টোররুমে রাখে। তীব্র সুঘ্রাণের পারফিউম একে একে ছড়িয়ে দেয় স্টোররুমে। এত বেশি পারফিউম ব্যবহার তিনি করেছিলেন যে, পুরো বাড়ি ঘ্রাণে ম ম করছিল। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের বিকেল। ঘরে ঢুকেই কেমন একটা সুঘ্রাণ পাচ্ছিল দুই কন্যা। মা'কে জিজ্ঞেস করতে থাকে কিসের ঘ্রাণ এটা। মা তেমন একটা গা করেন না। দুই কন্যাকে জানান, বাবা হুট করেই বিদেশ চলে গেছেন। সাতদিন স্টোররুমে পরে থাকে নাজিমের মরদেহ। প্রতিদিন নিয়ম করে পারফিউম আর আতর দিয়ে স্টোররুম ভরিয়ে ফেলতেন তিনি। কোন ক্রমেই পচা লাশের গন্ধ বাইরে আসেনি। সাতদিন পর কম্বল টেনে ঘর থেকে বের করে পাশেই পুকুরে ফেলে দেন। নাজিম নামের একজনের পরিচয় পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়। কিছুদিন পরই পুকুর থেকে ভেসে ওঠে কম্বল। পুলিশ ডুবুরি দিয়ে উদ্ধার করে অর্ধ গলিত লাশ। পরিচয়হীন এই লাশ নিয়ে বিপাকে পরে পুলিশ। বেশ কিছুদিন পুলিশ তদন্ত করেও সুরাহা করতে পারে না। তাই দুই বছরের মাথায় নিয়ম অনুযায়ী কেসটি চলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে। সূত্রহীন এই কেসে সিআইডির সন্দেহ হয় নাছিমা আক্তারের পরিবার নিয়ে। কেন সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নাছিমা আক্তারের স্বামী একবারের জন্যও ফিরল না বাংলাদেশে। জুলাই অভ্যুত্থানে আরব আমিরাতের বেশ কয়েকজন প্রতিবাদ করে সেখানকার সরকারের জনরোষের স্বীকার হয়েছিলেন, ছাড়াও পেয়েছেন। নাছিমা আক্তারের স্বামী নাজিম তবে কোথায় গেল? ঘটনার প্রায় সাত বছর পর নাছিমা আক্তার ও তার দেবরকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নিজের স্বামী নাজিমকে খুন করে পুকুরে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে নাছিমা আক্তার। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে সাত বছর আগের সূত্রহীন এই মার্ডার কেসের সমাধান প্রকাশ করেছে সি আইডি। সেসময় আটককৃত নাছিমা আক্তারকেও প্রথমবারের মতো সামনে আনা হয়।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক -শেখ তিতুমীর আকাশ। প্রকাশ কর্তৃক : এডভানসড প্রিন্টং - ক-১৯/৬, রসুল বাগ, ঢাকা। মহাখালী ঢাকা হতে মুদ্রিত এবং ১৭৮, পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা-১২১৭ হতে প্রকাশিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ অফিসঃ ৩৮৯ ডি আই.টি রোড (৫ম তলা) পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা ১২১৯ ,মোবাইল: - ০১৮৮৩২২২৩৩৩,০১৭১৮৬৫৫৩৯৯ ইমেইল: abhijug@gmail.com
Copyright © 2025 Weekly Abhijug. All rights reserved.